এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শিশু বয়সেই মাকে হারিয়েছেন। ছবি না থাকায় মায়ের চেহারাও স্মৃতিতে নেই। বিশ্ব মা দিবসে মায়ের কথা স্মরণ করে তাই অঝোরে কাঁদলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসের রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
এদিন ১১ জন গর্ভধারিণী মাকে ‘গরবিনী মা-২০২৪’ সম্মাননা প্রদান করে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গরবিনী মায়েদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন মন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। গলা থেকে স্বর যেন বের হতে চাইছিল না। চোখ মুছতে মুছতেই বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
মাকে স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য আমি আজ থেকে ৭৫ বছর আগে মাকে হারিয়েছি। তখন আমি শিশু ছিলাম। মায়ের কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ওই সময় ছবি তুলে রাখার মতো প্রযুক্তি সহজলভ্য ছিল না। আমি ছবিতেও দেখিনি আমার মা কেমন ছিলেন। আমি আমার মায়ের চেহারা মনে করতে পারি না।’
অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘মায়েদের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, সন্তানদের গড়ে তোলের জন্য মায়ের যে প্রচেষ্টা সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে না দেখলেও, আমার বাবা প্রতিবছর আমার মায়ের মৃত্যুদিবস পালন করতেন এবং বলতেন, তুমি জীবনে কখনও কষ্ট পাবা না। তোমার মায়ের দোয়া আছে। হয়তো এ জন্যই আমার এই দীর্ঘ জীবনে আমি ভালো থেকেছি। আমার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেয়েছি।’
‘আমি আমার মায়ের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য মায়ের নামে হাসপাতাল করেছি। মায়ের কবরের পাশে মায়েরই জমিতে এই হাসপাতাল। ভবিষ্যতে এটার পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। আমি মনে করি, আমার প্রতিটি কাজে মায়ের দোয়া আছে,’ যোগ করেন তিনি।
বর্তমান প্রজন্মের বাবা-মা ও সন্তানদের উদ্দেশে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মায়ের প্রতি ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। মোবাইল আসক্তির কারণে শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। মা ও দেশকে যেন সন্তানরা ভালোবাসে। আমি শঙ্কাবোধ করি, পারিবারিক সৌজন্যবোধ কমে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে সবাই বসে খাওয়ার সময় পায় না। মোবাইল দেখা, টিভি দেখা, পড়াশোনা করা সবকিছুই এখনকার সন্তানরা নিজের রুমেই থাকতে বেশি পছন্দ করে। আমাদের উচিত, চেষ্টা যেন থাকে একসঙ্গে কিছুটা হলেও সময় কাটানো।’
মায়ের ঋণ কখনও শোধ হয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাবা সাপোর্ট দেয়। কিন্তু দেখাশোনা করে মা। তাই মায়ের প্রতি ভক্তি, সম্মানবোধ, দায়িত্ববোধ যেন থাকে। আমরা যেন সেটা করি এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও যেন সেটা শিখিয়ে যাই।’